ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুনেছি অনেক প্রার্থী টাকা ছড়াচ্ছেন, তাতে কী, গরিব মানুষ টাকা পাচ্ছেন। তবে টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায় না, ফরিদপুরের মানুষ টাকায় বিক্রি হয় না। এ মাটি বঙ্গবন্ধুর মাটি ও নৌকার ঘাঁটি।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মাগুরার মানুষের কাছে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট চান।
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে কোরআন তেলোয়াত ও গীতা পাঠ শেষে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জনসভায় আসেন। এরপর প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন। উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য আবারো নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি নৌকা প্রতীককে নুহু নবীর প্রতীক হিসেবে উল্লেখ্য করে বলেন, নৌকা মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। আজ বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলছে নৌকা।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামিম হকের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগপ্রধান দেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আমাদের আমদানিকৃত সব পণ্যে অধিক মূল্য দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে অনেক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময় খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা টিসিবির মাধ্যমে ৫ কোটি মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়া শুরু করেছি, যা এখনো চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও বিধবা, বয়স্ক, মাতৃকালীন, প্রতিবন্ধীদের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের থাকার ব্যবস্থা করেছি, যা বিশ্বে মডেল। বর্তমানে দেশের ৩৩টি জেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত, পর্যায়ক্রমে সব জেলাও এর আওতায় আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে বলেন, সেই সরকার দেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছিল, দেশের গ্যাস সম্পদ বিক্রি করেই তারা ক্ষমতায় এসেছিল। ২০১৪-তে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, ২০১৮-তে মনোনয়ন বাণিজ্য করে নিজ দলের ভরাডুবি হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আশার পর আস্তে আস্তে দেশের অর্থনীতিকে দাড় করিয়েছি। আমার দলের নিবেদিত কর্মীরাই সব সময় দলের পাশে থেকেছে বলে আজ আমরা ক্ষমতায়। আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দেশকে এগিয়ে নিতে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা হাইটেক পার্কের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছি, আজ তার বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইলফোন, ইন্টারনেট। আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রত্যেক স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করে দিয়েছি। এখন অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করে দেশে বসে বিদেশ থেকে টাকা আয় করছে।
এ ছাড়াও সরকারপ্রধান সবাইকে অনুরোধ করেন, ১ ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখবেন না। আমিও গণভবনে কৃষি খামার গড়ে তুলেছি। আপনারা হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালন ও মৎস্য চাষ করবেন। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন- মাগুরার নৌকার প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ফরিদপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী শাহদাব আকবার লাবু, মো. ফারুক হোসেন মিয়া, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস প্রমুখ। এ ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাইফুজ্জামান শেখর, রাজবাড়ি-১ ও ২ আসনের নৌকার প্রার্থী কেরামত কাজী ও জিল্লুল হাকিম প্রমুখ।
সকাল থেকে জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে মিছিল আর স্লোগানে নির্বাচনী জনসভাস্থলে জড়ো হতে থাকে।